বইয়ের নাম - গর্ভধারিণী Pdf Download free bangla pdf book
লেখক - সমরেশ মজুমদার।
প্রচ্ছদ - সুব্রত গঙ্গোপাধ্যায়।
প্রকাশকাল - জানুয়ারি ১৯৮৩।
প্রকাশনী - মিত্র ও ঘেষ পাবলিশার্স।
পৃষ্ঠা সংখ্যা - ৪০০।
কাহিনী সংক্ষেপ -
কাহিনী চার তরুণ তরুণী সুদীপ, আনন্দ, কল্যান আর জয়িতাকে নিয়ে। কলকাতার আইন কলেজে পড়া এই চার ছেলেমেয়ের বন্ধুত্ব হয় খুব অদ্ভুত ভাবে। সমাজের ভিন্ন ভিন্ন অবস্থান থেকে আসা সত্বেও তাদের তাদের চিন্তা চেতনা, ধ্যানধারনা অনেকটাই একরকম। সুদীপ আর জয়িতা সমাজের বেশ উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তান। আরাম আয়েশ, প্রাচুর্য কোনও কিছুই অভাব নেই। কিন্তু পরিবার, বাবা-মা সম্পর্ক গুলো খুব ঠুনকো। ভদ্রতার লেবাসে যে বাবামাকে তারা চিনে তারা যেনো থেকেও নেই। আনন্দ মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। বাবা না থাকলেও মা তাকে খুব একটা অভাব ছাড়ায় মানুষ করছেন। এদিকে কল্যান টিপিক্যাল নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান। টাকার অভাব, খাবার কস্ট, প্রতিনিয়ত পারিবারিক কোন্দলের সাথে যুজতে হয় তাকে। বেশ একটা কমপ্লেক্সে ভোগে সে সবসময়। একসময় তাদের সবার স্বপ্ন ছিলো আইন পড়বে, বড় চাকরি করবে।
কিন্তু হঠাৎ করেই তাদের চারজনের জীবন বদলে যায়! তাদের ভাবনা, তাদের মূল্যবোধ, তাদের লক্ষ্য সবই বইতে থাকে ভিন্ন স্রোতে। সমাজে হওয়া সব রকম অনাচার, দূর্নীতি, অশ্লীলতা, পাপাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে তারা জীবনের কঠিনতম সিদ্ধান্ত নেয়।
দুঃসাহসী চারজন তরুন-তরুনী সমাজকে বদলে দিতে আর সমাজের চুপ থাকা শ্রেনিকে সোচ্চার করতে নিজেরা মিশনে নেমে পড়ে। ট্রেনিং না থাকা সত্বেও তারা কিছু কাজে সফল হয়, কিন্তু শেষমেষ পুলিশের ভয়ে তারা আত্নগোপনে চলে যেতে বাধ্য হয়। পরিবার , সমাজ, পড়াশোনা, নিজ শহর সব ত্যাগ করে তারা আত্নগোপন করে, হিমালয়ের পাদদেশের ছোট্ট একটা গ্রামে যেখানে সভ্যতার কোনও বালাই নেই। নেই বেঁচে থাকার প্রয়োজনীয় রসদ। সেখানেই শুরু হয় তাদের নতুন সংগ্রাম।
প্রতিকূল পরিবেশ, অশিক্ষা, অভাব এসবের ভীড়ে তারা জীবনের নতুন মানে খুঁজে পায়, খুঁজে পায় জীবনের নতুন লক্ষ্য। সেখানের মানুষের বেঁচে থাকার সংগ্রাম, টিকে থাকার সংগ্রাম তাদেরকে আন্দোলিত করে। আর এখানেই শুরু হয় তাদের মধ্যে থাকা নারী চরিত্রটির জীবনের এক নতুন অধ্যায়। যা পুরো গল্পের ধারা বদলে দিয়ে শুরু করে নতুন আলোর সন্ধান।
পাঠ প্রতিক্রিয়া -
এই বইটা শেষ করে বেশ কিছুক্ষণ আমি নিশ্চুপ হয়ে বসে ছিলাম। জীবনের আসলে মানে কি? সমরেশ মজুমদার তার লেখনিতে তৎকালীন কলকাতার এখন নিখুঁত বনর্না তুলে ধরেছেন। বইটা সামাজিক গল্প হলে আমার কাছে থ্রিলার থেকে কোনও অংশে কম মনে হয়নি। সমাজের নানা শ্রেনীর মানুষের জীবন যাপন, সমাজের নানা অসঙ্গতি, পাপাচার, বন্ধুত্ব সবকিছু নিখুঁত ভাবে বর্ননা করা হয়েছে। জয়িতা তৎকালীন সমাজের এক সাহসী নারী, যে পুরুষের সাথে সমান তালে কাজ করে দেখিয়ে দিয়েছে নারী পুরুষ থেকে কম নয়, বরং নারীই অমূল্য। নারীই সৃষ্টি করে এক নতুন প্রানের। গর্ভধারিণী বইটি সমরেশ মজুমদারের একটি মাস্টার পিস। আর এটি পড়ে আমিও সেটা স্বীকার করে নিয়েছি। দুঃসাহস, সংগ্রাম, নীতিবোধ, জীবন, পরিবার, বন্ধু, নারী-পুরুষ সবকিছু মিলিয়ে অসাধারণ একটা বই। পুরো বইটিতে আপনার একটু সময়ের জন্যও মনোযোগ সরবে না।
নামকরণের সার্থকতা -
বইটার অর্ধের বেশি পড়েও আমার মনে হচ্ছিলো বইটার নামকরণ আর কাহিনীর মধ্যে সংযোগটা কোথায়! কিন্তু কাহিনী যতো এগিয়েছে আমার নামকরণ নিয়ে থাকা সন্দেহটা একদম চলে গেছে! বইটা নাম আসলেই যথার্থ, আর এ নিয়ে বিন্দুমাত্র সন্দেহর অবকাশ নেই।
বইয়ের কিছু উক্তি -
* প্রিয়জন, সে যতই প্রিয় হোক না কেন, অসুস্থ হয়ে পড়লে এবং সে অসুখে জীবনহানির সম্ভাবনা থাকলে তো বটেই, মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়ে প্রতিকারের জন্যে। কিন্তু যদি সেই অসুস্থতা দীর্ঘকালীন হয়, যদি সুস্থ হবার সম্ভাবনা না থাকে তখন একসময় দায় বলে মন হতে বাধ্য। কেউ মুখে বলেন, কেউ ব্যবহারে প্রকাশ করে ফেলেন, কেউ বলেন না বোঝান না কিন্তু মনে মনে জানেন মুক্তি পেলে ভালো হতো।
* যেজন্য গরু পোষে মানুষ, যত্ন করে শিশুকাল থেকে খোল-বিচুলি খাওয়ায়, তেমনি করে আমরা তৈরি হই একটা ডিগ্রি পাওয়ার জন্য।
*যদি খিদে খুব বেশি থাকে এবং সে তুলনায় খাবার কম থাকে তখন পেট ভরাবার আমেজ পাওয়ার-উপায় হলো ধীরে, খুব ধীরে খাওয়া।
লেখককে নিয়ে কিছু কথা -
সমরেশ মজুমদারের জন্ম ১৯৪২ সালে। শৈশব কেটেছে ডুয়ার্সের চা বাগানে আর স্কুল জীবন কেটেছে জলপাইগুড়িতে। কলেজ জীবন কেটেছে স্কটিশ চার্চ কলেজ ও কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তাঁর প্রথম গ্রুপ থিয়েটার ও নাটক লেখা থেকে গল্প লেখার শুরু। সমরেশ মজুমদারের প্রথম গল্প প্রকাশিত হয় ১৯৬৭ সালে। তাঁর প্রতিটি উপন্যাসের বিষয়, গল্প বলার ভঙ্গি ও আঙ্গিক গতানুগতিক একঘেয়েমি থেকে মুক্ত। ১৯৮২ সালের আনন্দ পুরষ্কার, 'দৌড়' চলচ্চিত্রের কাহিনীকার হিসেবে বিভিন্ন পুরষ্কার ও ১৯৮৪ তে 'কালবেলা উপন্যাসের জন্য পুরস্কার পান। আকাদেমী পুরষ্কার তাঁর অনন্য সাহিত্য-কৃতিই অকুন্ঠ স্বীকৃতি।
পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
লিংক:
0 Comments: